প্রকাশিত: Thu, May 9, 2024 1:42 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 4:27 PM

আমি হেফাজতের মোল্লাদের নিয়ে চিন্তিত নই!

ইমতিয়জ মাহমুদ : শিক্ষা বিষয়ক একটা সেমিনার করেছে মোল্লারা, হেফাজতে ইসলাম। সেটা আয়োজন করেছিল ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইন্সটিটিউশনে। অনুষ্ঠানটা হয়েছে জাতীয় কানধরা দিবসে, অর্থাৎ মে মাসের পাঁচ তারিখে। সেমিনার বলতে আমাদের মনে সাধারণ যে চিত্রটা আসে সেরকম অনুষ্ঠান হয়নি। ওরা আসলে কানধরা দিবসটাই স্মরণ করতে চেয়েছিল, সেই লক্ষ্যে লোকজন জড়ো করেছিল। দর্শকের চেয়ে বক্তা কম ছিল না, মোটামুটি দর্শক বক্তার অনুপাত সমান সমান হবে। অসংখ্য বক্তা বক্তৃতা ঝেড়েছে লাইন ধরে, সবাই মোল্লা সাথে ছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চাতেপদাঘাতপ্রাপ্ত সেই ছোকরা শিক্ষকটা। মোল্লাদের দাবি তো খুবই সরল। সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থা ওরা চায় না, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যা কিছু সেক্যুলার ও মানবিক উপাদান আছে সব নাকি দূর করে দিতে হবে ইত্যাদি। আরেকটা উদ্ভট দাবিও আছে, আরবি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করতে হবে। ওদের কাছে এরকম দাবি তো অস্বাভাবিক কিছু না। এইটাই ওদের তামান্না। 

যদি সম্ভব হতো তাইলে তো ওরা সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ওদের নিজেদের পছন্দমতো পাল্টে দিতো। ওদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ধরন তো জানেন। ওদের প্রতিষ্ঠানগুলিতে কারিকুলাম ভিন্ন। তাছাড়া ওদের ওইসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষকের ইচ্ছা করলেই যেকোনো ছাত্র বা ছাত্রীকে যৌন কর্মে ব্যবহার করতে পারে। আমি হেফাজতের মোল্লাদের নিয়ে চিন্তিত নই। আমি জানি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি বিদ্যমান থাকে তাইলে এসব হুজুর ফুজুর মাদ্রাসা ফাদ্রাসা এগুলি গুরুত্ব হারিয়ে ফেলবে। এমনকি ওদের যেটা মূল পণ্য, মূল পরিচয় ধর্ম, সেটাও ধীরে ধীরে মানুষের জীবনে গুরুত্ব হারাবে। দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করার জন্যে সংগ্রাম গড়ে তোলাটা জরুরি, সেটা করতে পারলে এসব আবর্জনা বানের জলে ভেসে যাবে। সেই সাথে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাটা সেক্যুলার হওয়া চাই, জীবনমুখী হওয়া চাই, আরেকটু উন্নত হওয়া চাই। ওইসব মোল্লারা জানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা যত আধুনিক হবে, যত ধর্মনিরপেক্ষ হবে ততোই ওরা অপাক্তেয় হয়ে পড়বে। 

এজন্যেই ওরা জীবনমুখী বা ধর্মনিরপেক্ষ বা বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার চিহ্ন মাত্র দেখলেই আঁতকে ওঠে, মৃত্যুঘণ্টা শুনতে পায়। ওরা জানে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যত উন্নত হবে ওদের অবস্থাও ততই করুণ হবে। ধর্মভিত্তিক এই যে ব্যাপক বিভাজন গোটা উপমহাদশে এইটা ইংরেজরা তৈরি করেছিল খুব, সেইটাই সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলিকে তখনও শক্তি যুগিয়েছে এখনো তাইই। এই যে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হিন্দু মুসলিম বিভাজন, সেটা যদি না থাকতো তাহলে আপনি কি মনে করেন যে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় থাকতে পারতো? ক্ষমতা থাকা তো দূরের কথা, ওদের জন্মই হতো না। ইংরেজরা এই সর্বনাশটা করে গেছে। মোল্লাদের নিয় আমার শঙ্কা নাই, ওদের নিয়ে চিন্তিতও না। ওরা হচ্ছে কান ধরা পার্টি, ওদেরকে নিয়ে চিন্তার কি আছে। তাছাড়া এমনিতেও মোল্লাদের ঈমান আকিদা খুবই দুর্বল। নিজেরা যেটা বিক্রি করে খায়। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম, সেটার উপরও ওদের আস্থা খুবই কম শুধু লোক দেখানো। একাটা উদাহরণ তো চোখের সামনেই আছে। ইসলামে জিনার মতো ঘৃণ্য অপরাধ আর নাই। জিনা মানে কী? বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে যৌন সম্পর্ক স্থাপন। ইসলামে জিনা হচ্ছে হুদুদ অর্থাৎ পৃথিবীর মাটিতে আল্লাহর বিরুদ্ধে অপরাধ। 

শাস্তি কী? ক্ষেত্রভেদে দোররা মারা থেকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা। জিনাকারি মামুনুলকে এরা একটা ধমকও দিয়েছে? আমার শঙ্কা কাদের নিয়ে? শঙ্কা হচ্ছে সাবেক চীনপন্থি একসময়ের বামপন্থী ফরহাদ মজহার ধরনের লোকজনকে নিয়ে। এরা পাশ্চাত্য ধরনের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, বুদ্ধিমান মানুষ। এরা অন্ধকারের পথকে আযুক্তি কুযুক্তি দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে মধ্যবিত্তের কাছে গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপন করে আর তাতে করেই ধর্মভিত্তিক পরিচয় এবং ধর্মব্যবসায়ি ওইসব হেফাজত ইত্যাদির প্রতি সমাজে একটা সহানুভূতি তৈরি হয়। এর উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। আপনাদের মনে আছে হেফাজতের ১৩ দফা দাবির কথা। তেরো দফা দাবি তো অন্ধকার দাবি, সেই দাবির পক্ষে ইনিয়ে বিনিয়ে লেখা ফরিদা আক্তারের প্রবন্ধ আপনাদের মনে নাই? এসব লোকেদের দিকে চোখ রাখুন, ওদের ইন্টেলেকচুয়ালি প্রতিরোধ করুন, ওদের সাথে ওঠাবসা বন্ধ করুন। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে যদি এসব লোক সাবেক চীনপন্থি, ভাসানি ভক্ত, ক্রনিক ভারত বিদ্বেষ ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকগুলি বিনাশ হয়ে যায়। না  শারীরিকভাবে বিনাশ নয়, বাজারে ওদের যে খানিকটা উপস্থিতি আছে সেটা যদি দূর হয় আরকি। লেখক: আইনজবীবী। ৭-৫-২০২৪। ফেসবুক থেকে